শিরোনাম

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

আদিত্যপুর গণকবর’। ছায়া ঘেরা সুশীতল ছায়ায় কালের নির্মমতার জ্বলন্ত স্বাক্ষর


ফরহাদ আহমদ
বালাগঞ্জ প্রতিনিধি

 ‘আদিত্যপুর গণকবর ছায়া ঘেরা সুশীতল ছায়ায় কালের নির্মমতার জ্বলন্ত স্বাক্ষর।একাত্তরের  ১৪ই জুন গ্রামজুড়ে উৎসব মূখর পরিবেশ বিদ্যমান ছিল। কিন্তু নরপশু পাকিস্তানী আর রাজাকার কমান্ডার আব্দুল আহাদ (ছাদমিয়ার আগমনে মুহুর্তেই তা 

পরিনত হয় মৃত্যুপুরীতে।

                                                                শান্তি কমিটিতে নাম লেখালে কাউকে হত্যা করা হবে না’ এরকম ঘোষণা দেয়া হয় স্কুলের মাঠে। ঘোষণার পর ধীরে ধীরে স্কুলের মাঠে লোক সমাগম বাড়ে। সহজসরল লোকগুলো জীবন বাঁচানোর জন্যপরিবারের সুরক্ষার জন্য শান্তি কমিটিতে নাম লেখাতে চেয়েছিল  ঐইদিন সকালে দুটি জিপে করে ২০ থেকে  ২৫ জন পাকিস্তানি সেনা রাজাকারদের সহযোগিতায় গ্রাম থেকে নিরীহ লোকদের ধরে নিয়ে যায়।হিন্দু এবং মুসলমান ধর্মের লোকজনকে আলাদা লাইনে দাড়াতে বলা হয়।

আদিত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ৬৫ জনকে লাইনে দাঁড় করা হয়।একটু দূর গিয়ে ক্যাপ্টেনের সাথে রাজাকার ছাদ মিয়া কানাকানি শুরু করে। কিছুক্ষন পর ফিরে এসে হিন্দুদের লাইন লক্ষ্য করে গুলির নিদের্শ দেয়।মুহূর্তের মধ্যেই মাঠের সবুজ ঘাস মানুষের রক্তে লাল হয়ে যায়।গুলির শব্দে চারদিক প্রকম্পিত হতে থাকে। রক্ত গঙ্গা বয়ে চলে সবুজ মাঠের বুক চিরে। মুহুর্তেই নিভে যায় ৬৩টি জীবন প্রদীপ। ভয়াবহতার মাত্রা বাড়াতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় ঘরবাড়ীতে। লোটপাট আর নির্যাতন চলে সমান তালে।   নারকীয় তাণ্ডব দেখে এলাকাবাসী দিশেহারা হয়ে পড়ে। পাকিস্তানী খুনি বাহিনী আর রাজাকারেরা চলে যাওয়ার পরও স্বাভাবিক হয়নি গ্রামের পরিস্থিতি। জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে পুরো অঞ্চল। লাশ গুলো পড়ে থাকে স্কুলের মাঠে। অনেক লাশের শরীর খুবলে খায় শিয়াল কুকুর।

 এখানেই শেষ নয়। ১৭ই জুন রাজাকাররা আবার আসে আমাদের গ্রামে। মিডিয়া থেকে আড়াল করতে কোন রকম ধর্মীয় আচার ছাড়াই লাশগুলো মাটি চাঁপা দেয় তারা। ২২শে জুন মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানীর উপস্থিতিতে মাটি খুঁড়ে লাশ বের করা হয়। পোষ্টমর্টেমের জন্য প্রেরণ করা হয় সিলেট সদর হাসপাতালে। সেখানে দেশী  আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সামনে লাশের সংখ্যা গণণা করা হয়। তারপর লাশগুলো আদিত্যপুর এনে বর্তমান গণকবরে সমাহিত করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের বেশ কয়েক বছর পর যুদ্ধাহত শিবপ্রসাদ সেন আদিত্যপুর গণকবরের সীমানা নির্ধারণে দেয়াল তৈরির কাজে হাত দেন। ইটবালু ইত্যাদি ক্রয় করার পর জমির মালিক বাধা দেয়। ফলে তার  উদ্যোগ ভেস্তে যায়। ১৯৮৪ সালের ৩০ এপ্রিল বালাগঞ্জ থানা পরিষদের এক সভায় আদিত্যপুর গণকবর নামে ২৪ হাজার ৮৩২ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। চারদিকে দেয়াল দেয়ার পর টাকা শেষ হয়ে যায় । প্রাক্তন সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বালাগঞ্জের চারটি গণকবরের মধ্যে বুরুঙ্গা  আদিত্যপুর এই দুটি গণকবরের স্থান টালইস দিয়ে সংস্কারের কাজ করা হয়। বিভিন্ন দিবসে স্থানীয় সাধারণ জনগণ সেই গণকবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

 

 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ