![]() |
আমাদেরবুরাইয়ার হুজুর
-মাওলানা মাহমুদহাসান চৌধুরী রায়হানফুলতলী
কিছুপ্রিয়জনের স্মৃতি ভোলাযায় না। রক্তসম্পর্কের আত্নীয় না হয়েও যারাআত্নার আত্নীয়, কতইনাআপনজন। হযরত মাওলানাআব্দুল কাদির ছাহেব(র.) বুরাইয়া হুজুরআমাদের তেমনি এক আত্নীয় ছিলেন।
বুরাইয়াহুজুরের সাথে আমাদেরস্মৃতি অনেকটা মাহেরামাদান কেন্দ্রিক। রামাদানআসলে আমরা হুজুরেরজন্য অপেক্ষা করতাম।তিনি না পৌছাপর্যন্ত মনে হতোকি যেন অপূর্ণতারয়ে গেছে। ফুলতলীএসে চিরচনা সেইদরাজ হাসি ছড়িয়েবলতেন আলহামদুলিল্লাহ, আমিচলে এসেছি।
দারুলকিরাতের খিদমাতে জড়িতথাকার সুবাদে দীর্ঘদিনহুজুরকে খুব কাছেথেকে দেখার সুযোগহয়েছে। তিনি ছিলেনএকজন আবিদ, কোরআনেপাকের আশিক, সদাহাস্যোজ্বল, আল্লাহরওলী। হযরত আল্লামাফুলতলী ছাহেব কিবলাহ(র.)-এর সাথেতাঁর আন্তরিকতা কল্পনাকেওহার মানাত। দারুলকিরাতের কোন বিষয়েবিশৃঙ্খলা/অনিয়ম দেখেছাহেব কিবলাহ রাগান্বিতহলে বাবা-চাচারাতখন সামনে যেতেননা। বুরাইয়ার হুজুরবাচ্চাদের মতো ছাহেবেরসামনে হাজির হয়েসব দায়ই মাথাপেতে নিতেন। ইন্তেকালের পর যখনই ছাহেবকিবলাহ সম্পর্কে কোনআলোচনা হতো অঝোরধারায় তাঁকে কাদতেদেখেছি।তিনি ছিলেন হযরতফুলতলী ছাহেব কিবলাহ(র.)-এর সুযোগ্যখলিফা। কথায় আছেমানুষ যখন কাউকেভালোবাসে তার সবকিছুইতার ভালো লাগে।ছাহেবজাদাগন বা এ বাড়ির কোনআত্নীয়-স্বজন এমনকিছাহেব বাড়ির কাজেরমানুষের সাথে হুজুরেরঅকৃত্রিম ও অমায়িকব্যবহারে ছাহেব কিবলাহরপ্রতি তাঁর মুহাব্বাতের প্রমাণপাওয়া যেত।
আমাদেরওয়ালিদ মুহতারাম (মাইজমছাহেব) কোন এক রামাদানে হুজুরকেউনার সন্তান-সন্ততিসম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেতিনি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেজানালেন তাঁর কোনসন্তান নেই। তৎক্ষনাৎহুজুরকে নিয়ে ছাহেবকিবলাহ (র.) এর কাছে গেলেতিনি দোয়া করলেন।আলহামদুলিল্লাহ, পরবর্তীতে আল্লাহপাক তাঁকে দীর্ঘ২১ বৎসর পর সন্তান দানকরেন।
তিনিসুদীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ফুলতলীতেদারুল কিরাত প্রধানকেন্দ্রে নি:স্বার্থভাবে খিদমাতআনজাম দিয়েছেন। দারুলকিরাতের খিদমাতে কঠোরপরিশ্রম করেছেন। বিশেষত: খাবার বিতরণের সময়হুজুরই শৃঙ্খলা রক্ষায়নেতৃত্ব দিতেন । চরম বৃষ্টিরদিনে সেহরির সময়েমাথায় করে বয়েএনে ছাত্রদের খাবারবিতরণ করতেন। বাল্যকালেআমরা দেখেছি হুজুরফুলতলীতে মসজিদের কাছেরবাংলাঘরে থাকতেন। তখনকারসময়ে ভারতের মাওলানামুবাশ্বির আহমদ ছাহেবওহুজুরের সাথে থাকতেন।ইফতারের পর পানখেয়ে বিভিন্ন বিষয়েতারা যখন আলাপকরতেন তখন এত আনন্দঘন পরিবেশ থাকত ভাষায় প্রকাশ করার নয়। বয়সের অনেক তফাৎ সত্ত্বেও তাদের আন্তরিকতা- অন্তরঙ্গতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
সদা হাস্যোজ্জ্বল ও দরাজদিল হওয়ায় হুজুর সবার প্রিয় ছিলেন। ছাত্ররা হুজুরকে শ্রদ্ধা করত এবং ভালবাসত। ছাত্রদের কোন বিষয়ে সুপারিশ লাগলে তারা বুরাইয়া হুজুরের কাছেই যেত। পরীক্ষার লাইনে দাড়ানো ছাত্ররা হুজুরের কাছে পরীক্ষা দিতে প্রতিযোগিতা করত। তাদের ধারণা ছিল হুজুর রহমদিল হওয়ার কারণে কিছু ভুলত্রুটি হলেও পরীক্ষায় পাশ করে দিবেন। যদিও তিনি পরীক্ষার বিষয়ে আপোষহীন ছিলেন।
বিগত কয়েক বছর থেকে হুজুর দূর্বল হয়ে পড়ায় রামাদানে পরীক্ষা নিতে পারতেন না তবে ক্লাস করাতেন নিয়মিত। ক্লাস ছাড়া সবসময় তিনি তিলাওয়াতে মশগুল থাকতেন। রামাদান মাসে কোরআনে পাকের কত খতম যে তিনি করতেন আল্লাহ পাকই ভালো জানেন। উনি প্রায়ই বলতেন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত যেন ফুলতলীতে এসে ইলমে কিরাতের খিদমাত করতে পারেন।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের প্রিয় উস্তাদ হযরত মাওলানা আব্দুল কাদির ছাহেব (র.)-এর দরজা বুলন্দ করে দিন। তাঁর ইলমে কিরাতের খিদমাতসহ সকল খিদমাতকে কবুল করে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন। আমিন।
0 মন্তব্যসমূহ