দারুলকিরাত
-মাহমুদহাসান চৌধুরী রায়হান (ফুলতলী)
হযরতআল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর সবচেয়ে মকবুলখিদমাত হচ্ছে দারুল কিরাত তথা ইলমে কিরাতের খিদমাত। সুদীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর থেকেমানুষকে বিশুদ্ধ কুরআন শিক্ষা দিয়ে আসছে এই প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশসহবিশ্বের বিভিন্ন দেশে লাখো মানুষ দারুল কিরাতের মাধ্যমে সহীহ শুদ্ধ কুরআন শিক্ষা নিয়েছেন এবং এখনো নিচ্ছেন। তাই দারুল কিরাতের বিষয়ে ছাহেবজাদাগণসহ ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর সকল মুরিদান-মুহিব্বীনরা সবসময় আপোষহীন।
আপনাদেরঅবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট-এর অধীন প্রধানকেন্দ্র বা অন্যান্য শাখাকেন্দ্রের কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত এমনিতেই নেওয়া হয়নি। কঠোর লকডাউন, সরকারি বিধি-নিষেধ এর কারণে বাধ্যহয়ে এই দুঃখজনক ওকঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দারুলকিরাতের এই ঘোষণায় সবচেয়েবেশি কস্ট পাচ্ছেন মুরশিদে বরহক হযরত বড় ছাহেব কিবলাহসহঅন্যান্য ছাহেবজাদাগণ। দারুল কিরাত সাময়িক স্থগিতের এই আক্ষেপ তাঁদেরচোখেমুখে ফুটে উঠেছে। দীর্ঘদিন (৩০-৫০ বৎসর) থেকে তাঁরা দারুল কিরাতের খিদমাতের সাথে সম্পৃক্ত। তাঁদের এক একটি দীর্ঘশ্বাসথেকে বুঝা যায় কালামে পাকের খিদমাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কস্ট। হযরত বড় ছাহেব দারুলকিরাতের খিদমাত জারি হওয়ার জন্য যেভাবে সবসময় দু'আ করেনপাষাণ হৃদয়ও তাতে অশ্রুসিক্ত হয়। দু'আর মধ্যেতাঁর হৃদয়ের আকুতি ও হাহাকার ফুটেউঠে। আমার ওয়ালিদ মুহতারাম (মাইজম ছাহেব) যিনি রামাদ্বান মাসে সকালের আম মশক থেকেশুরু করে রাত-দিন ছাত্রদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন তিনি এসব নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করে এখন অসুস্থ হয়ে গেছেন। অন্যান্য ছাহেবজাদাদের আক্ষেপ ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এছাড়া দারুল কিরাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই
অধীরহয়ে দারুল কিরাত শুরুর অপেক্ষা করেছেন।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দারুল কিরাতের বেশিরভাগ শাখা কেন্দ্রের নিয়োগ ও অনুমোদনসহ অন্যান্যপ্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রধান কেন্দ্র ফুলতলী ছাহেব বাড়িতে ছাদিছ জামাতের ছাত্রদের জন্য অনলাইন আবেদন ছাড়াও অন্যান্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে করোনা মহামারি বেড়ে যাওয়ায় কঠোর লকডাউন ও সরকারি বিধি-নিষেধ আরোপের প্রেক্ষিতে দূর দূরান্তের ছাত্রদের যাতায়াত, আবাসন সংকট (একসাথে অনেক ছাত্রের অবস্থান) ও ক্লাস রুমেরস্বল্পতায় ছাত্রদের স্বাস্থ্য ঝুকির কথা বিবেচনায় রেখে এই কঠিন সিদ্ধান্তইচ্ছার বিরুদ্ধে নিতে হয়েছে।
তাইদারুল কিরাতের বিষয়ে অতিরিক্ত আবেগতাড়িত হয়ে বিভিন্ন অযৌক্তিক দাবি, ঘোষণা , ফেইসবুকে দরখাস্ত লিখা, বাণী প্রচার বা আজগুবি তথ্যপ্রচার থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিৎ। বরং আমাদের উচিৎ মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে এই দু'আকরা যাতে আল্লাহ পাক এই পৃথিবী থেকেগজব দূর করে রহমত নাযিল করেন এবং মানবজাতিকে এই ভয়াবহ দুর্যোগথেকে হেফাযত করেন। আমরা যেন আবারও দারুল কিরাতের মাধ্যমে কালামে পাকের খিদমাতের সুযোগ পাই।
সবারকাছে অনুরোধ দারুল কিরাতের বিষয়ে কিছু প্রচারের আগে একটু চিন্তা-ভাবনা করে সত্য মিথ্যা-যাচাইপূর্বক পোস্ট বা শেয়ার করবেন।
0 মন্তব্যসমূহ